একবার ক্যাথিড্রাল চার্চ! ফের মসজিদ! আবার মিউজিয়াম বা সংগ্রহশালা। অবশেষে বিশ্বের অন্যতম ইউনেস্কো হেরিটেজ! ইস্তানবুলের হেগিয়া সোফিয়া মিউজিয়ামকে ঘিরে রয়েছে এমনই ইতিহাস। এবার সেই ইতিহাসই ভাঙতে চলেছে।
একধাক্কায় স্থানীয় আদালত এবং তুর্কির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগানের ঘোষণায় বদলে যাচ্ছে মিউজিয়াম। ফের ইউনেস্কোর এই হেরিটেজ পরিবর্তিত হচ্ছে মসজিদে! এমনকি আগামী ২৪ জুলাই থেকে শুরু হবে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের প্রার্থনাও।
এমনই সিদ্ধান্তে বিস্মিত হয়েছে বিশ্বের একটা বড় অংশ। ইউনেস্কোর পক্ষ থেকেও অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে।ইউনেস্কো বলছে, সরাসরি আলোচনা না করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তুর্কির নেই। ইস্তানবুলের বহু মানুষ এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলেও, ধোপে টেকেনি কোনও দাবিই। হেরিটেজ এই মিউজিয়ামকে মসজিদে রূপান্তরিত করতেই এগিয়েছে সেদেশের সরকার। একটা বড় অংশের জনতার মধ্যে লক্ষ্য করা গিয়েছে উচ্ছ্বাসও।
আদালতের এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়ার অর্থোডক্স চার্চ।
তুর্কির ইস্তানবুলের এই ক্যাথিড্রাল মিউজিয়াম পর্যটকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিবছর এই দর্শনীয় স্থানে আসতেন গোটা বিশ্বের প্রায় ৩.৭ মিলিয়ন মানুষ। অর্থাৎ প্রায় ৩৭ লক্ষ মানুষের ভিড় জমত এই মিউজিয়াম দেখতে।
প্রসঙ্গত, ৫৩৭ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ বাইজান্টিয়ানের রাজা জাস্টিয়ান, হেগিয়া সোফিয়ার মূল কাঠামো নিজের রাজত্বের প্রয়োজনে তৈরি করেন। যা ক্রমেই বিশ্বব্যাপী বিশ্বাস করা হতে শুরু করে সর্ববৃহৎ ক্যাথিড্রাল চার্চ হিসেবে।
এরপর, ১২০৪ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ এই শহর আক্রমণ করেন ক্রুসোডার গোষ্ঠী। দখল হয় এই সাম্রাজ্য।
১৪৫৩ নাগাদ ফের আক্রমণ। দ্বিতীয় অট্টোমান সুলতান মাহমুদ দখল করেন সম্পূর্ণ অঞ্চল। হেগিয়া সোফিয়া ক্যাথিড্রাল চার্চে শুক্রবারের প্রার্থনা শুরু হয়। এই সম্রাট চার্চকে মসজিদে রূপান্তরিত করেন। গাত্রে গাত্রে ফুটিয়ে তোলেন ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের চিত্র। ক্যালিওগ্রাফি।তারপর বহুকাল কাটার পরে, অট্টোমানদের সাম্রাজ্য যখন শেষের পথে তখন আস্তে আস্তে ফের এই চার্চ পুরনো মহিমায় উদ্ভাসিত হতে থাকে। ১৯৩৪ নাগাদ এটিকে মিউজিয়াম বা সংগ্রহশালায় পরিণত করা হয়। পরবর্তীকালে, ইউনেস্কো হেরিটেজ মর্যাদা দেয় এই ঐতিহাসিক স্থানকে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি।