করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতির কারণে বিএনপির দলীয় কর্মকাণ্ড ২৫ জুন থেকে বর্ধিত করে আগামী ২৫ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। এ মর্মে ২৪ জুন (বুধবার) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী একটি প্রেসবিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন।
কিন্তু এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোন তথ্য নেই দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের কাছে। তারা জানেনই না, কোথা থেকে হুট করে এলো এই সিদ্ধান্ত? এ নিয়ে দলে সৃষ্টি হয়েছে রহস্য, উঠেছে নানা গুঞ্জন।
দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির শীর্য পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে কোন একতা নেই। একে-অপরের কথা মানেন না। নিজেই নিজেদেরকে বিএনপির সর্বে-সর্বা ভাবেন। এ কারণে সাংগঠনিকভাবে বিএনপি আজ বিলীনপ্রায় রাজনৈতিক দল। তাদের নিজে একাই একশো নীতির কারণে ১৫ জুলাই পর্যন্ত বিএনপির যে সাংগঠনিক গঠন ও পুনর্গঠন কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে, তা জানেন না অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতারা। তাদের মতে, এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ গায়েবি সিদ্ধান্ত। দলীয় সিদ্ধান্ত হলে অবশ্যই তাদের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো।
অন্যদিকে দলের আরেকটি অংশ বলছে, এই বৃহৎ সিদ্ধান্ত আসতে পারে দুই জায়গা থেকে। প্রথমত, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে। দ্বিতীয়ত, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের পরামর্শক্রমে। আর সে ক্ষেত্রে দলের সিদ্ধান্ত ঘোষণাকালে অবশ্যই সিদ্ধান্তের জায়গা, তথ্যসূত্র ব্যবহার করতে হবে। তাই ২৪ জুন (বুধবার)বিএনপির দলীয় প্যাডে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত সাংগঠনিক গঠন ও পুনর্গঠন সংক্রান্ত যে প্রেসরিলিজ জনসম্মুখে এসেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
অপরদিকে বিএনপির একটি বিক্ষুব্ধ অংশের দাবি, লন্ডন থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্দেশিত এ ঘোষণা, দলের শৃঙ্খলা বহির্ভূত ঘোষণা। যদি তিনি এমনটি করে থাকেন, তবে ঠিক করেননি। কারণ, এ নিয়ে এখন অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
সিএনএন ক্রাইম নিউজের হাতে আসা রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত ওই প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে লেখা আছে-বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম বা সাংগঠনিক গঠন ও পুনর্গঠন কার্যক্রম আগামীকাল ২৫ জুন ২০২০ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছিল। এই স্থগিতাদেশ আগামী ১৫ জুলাই ২০২০ বুধবার পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশিত স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি এবং সামাজিক দূরত্ব অনুসরণ করে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম বা সাংগঠনিক গঠন ও পুনর্গঠন কার্যক্রম আগামী ১৬ জুলাই ২০২০, বৃহস্পতিবার থেকে পর্যায়ক্রমে সীমিত আকারে শুরু করা হবে।
কিন্তু প্রেস বিজ্ঞপ্তির কোথাও সিদ্ধান্ত কোথায় থেকে এলো তা উল্লেখ না থাকায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা। তারা বলছেন, সম্প্রতি দেখছি অনেক কিছুই হচ্ছে দলের নামে। কিন্তু তারা সে বিষয়ে অবগত নন। তাছাড়া অনেকেই ব্যক্তিগত কাজ দলের নামে করাতে বিষয়টি অনেকেই খারাপ চোখে দেখছেন।
এ বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দলের সিদ্ধান্ত মানে দলের সব নীতি-নির্ধারকের। দলীয় সিদ্ধান্তে কাউকে নির্দিষ্ট করার প্রয়োজন নেই। তবে এটা তারেক রহমান থেকে আসা নাকি স্থায়ী কমিটি থেকে আসা? তাছাড়া কিছু বিষয়ে কেউ একা সিদ্ধান্ত নিলে সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। সাংগঠনিক কার্যক্রম এটা দলেরই সিদ্ধান্ত।
দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপিতে গ্রুপিং-অন্তদ্বন্দ্ব পুরনো ঘটনা। তাছাড়া তারা তাদের একে-অপরকে না মেনে নানা সিদ্ধান্ত নেন, সেটাও দেশবাসী অবহিত। আর সবচেয়ে বড় কথা, তাদের মধ্যে একতা বা নিজেদের মধ্যে বন্ডিংটা সেভাবে নেই বলেই তারা প্রতিটি নির্বাচনে ব্যালট-ইভিএমে বারবার জনগণের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন।