২১তম ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলনে গঠনতন্ত্রে বড় কোনো পরিবর্তন না হলেও কয়েক বছর ধরে বিতর্কিত সহ-সম্পাদক পদ না রেখে বিষয়ভিত্তিক উপকমিটি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে গঠনতন্ত্রে সংশোধন করছে আওয়ামী লীগ। দলটির গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটি ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি খসড়া প্রস্তাব প্রস্তুত করেছে।
আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বুধবারের (১৮ ডিসেম্বর) সভায় বিষয়টি অনুমোদনের পর দলের ২১তম জাতীয় কাউন্সিলের ২য় অধিবেশনে এটি উত্থাপন করা হবে। সেখানে কণ্ঠভোটে পাস হলে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র থেকে সহ-সম্পাদক পদটি উঠে যাবে এবং বিষয়ভিত্তিক উপকমিটি অন্তর্ভুক্ত হবে। দলটির গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটি সূত্র এসব তথ্য গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে।প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিলের আগে-পরে কেন্দ্রীয় কমিটিতে সহ-সম্পাদক পদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিলো। গঠনতন্ত্রে ৯৫ জন থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে তা ৫ শতাধিক ছিলো বলে সে সময় অনেকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কাছে অভিযোগ করেন। ২০১৭ সালে এক অনুষ্ঠানে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, গায়ের সঙ্গে ধাক্কা লাগলেই বলে আমি সহসম্পাদক। সে সময় তিনি সহ-সম্পাদকের পদ কমিয়ে আনা হবে বলেও মন্তব্য করেছিলেন। পরবর্তীতে ২০তম কাউন্সিলের পর সহ-সম্পাদকের খসড়া তালিকা প্রস্তুত করা হলে তা নিয়ে বিতর্কের ঝড় ওঠে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে।
দলীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক নিয়ে বর্তমান কমিটির শুরুতেই বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। এসব পদের অনেকেই শিক্ষা জীবনে বা অতীতে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন না। শুধু কেন্দ্রীয় নেতাদের সুপারিশে আওয়ামী লীগের মতো দলের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে ছিলেন অনেকেই। এমনও দু-একজন ছিলেন যারা অতীতে ছাত্রদল করতেন। সহ-সম্পাদকের তালিকায় তাদের নামও ছিল।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ২৫(১)ক অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে- সভাপতি বিভাগীয় (সম্পাদকীয় বিভাগ) উপ-কমিটিগুলো গঠন করবেন। তিনি প্রত্যেক উপকমিটির জন্য অনূর্ধ্ব পাঁচজন সহ-সম্পাদক মনোনীত করবেন।’ একই ধারার ‘চ’-তে বিভাগীয় উপ-কমিটি গঠন নিয়ে বলা আছে- ‘আওয়ামী লীগ প্রত্যেক সম্পাদকীয় বিভাগের কার্যক্রম অধিকতর গতিশীল ও সমন্বিত করার লক্ষ্যে প্রতিটি সম্পাদকীয় বিভাগে একটি করে উপকমিটি গঠন করবে। উক্ত উপকমিটি একজন চেয়ারম্যান, একজন সম্পাদক, অনূর্ধ্ব পাঁচজন সহ-সম্পাদক, প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিশেষজ্ঞ সদস্য, সংশ্লিষ্ট সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং নির্দিষ্ট সংখ্যক সদস্য সমন্বয়ে গঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের দফতর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দলটির ১৯টি বিভাগভিত্তিক সম্পাদকীয় কমিটি রয়েছে। গঠনতন্ত্র মোতাবেক প্রত্যেকটি বিভাগভিত্তিক সম্পাদকীয় কমিটিতে ৫ জন করে সহ-সম্পাদক থাকার কথা। সে হিসাবে মোট সহ-সম্পাদকের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৫। কিন্তু জটিলতা এড়াতে বর্তমান কমিটির উপ-কমিটিগুলোতে কোনো সহ-সম্পাদক পদ রাখা হয়নি।
গঠনতন্ত্রে কী কী পরিবর্তন আনা হচ্ছে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত গঠনতন্ত্র পরিবর্তন বিষয়ক উপকমিটির সদস্য সচিব ও দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন বলেন, এবার গঠনতন্ত্রে বড় কোন পরিবর্তন নেই। তবে ছোটখাটো পরিবর্তন আছে। সহ-সম্পাদকের বিষয়টা না থাকার জন্য আমরা কাউন্সিল অধিবেশনে প্রস্তাবনা দেব। এর বাইরে উল্লেখ করার মত তেমন কোনো পরিবর্তন নেই।
তিনি বলেন, বিষয়ভিত্তিক উপ-কমিটির সদস্য থাকবে। তারা সেমিনার, আলোচনা সভা, কর্মশালা করবেন। তারা বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করবেন এবং তা সুপারিশ আকারে কেন্দ্রীয় কমিটিতে দাখিল করবেন।
আরেকটি সূত্র জানায়, গঠতন্ত্রে সহযোগী সংগঠন আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ-এর নাম পাল্টে ‘বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ’ অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এছাড়াও কেন্দ্রীয় কমিটির মতো মহানগর, জেলা, উপজেলা কমিটিতে কতজন সদস্য থাকতে পারবেন তা নির্দিষ্ট করতেও গঠনতন্ত্রে সংযোজন করা হবে। তাছাড়া দলের সদস্য ফরমে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ফোন নম্বর অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি যুক্ত হবে।
সিএনএন ক্রাইম