চট্টগ্রামে করোনভাইরাসে (কোভিড-১৯) গণ সংক্রমণ প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে। এখন অপেক্ষা শুধু রেড জোন ঘোষণার। গেল কয়েকদিনে মহানগরী ছাড়িয়ে উপজেলাগুলোতে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।
যদিও এখনও মোট আক্রান্তের ৭০ শতাংশ মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। আর ৩০ শতাংশ চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলার। তবে শুরুর দিকে যেভাবে মহানগরীতে করোনা পজিটিভ রোগী বেড়েছে, সেই চিত্র এখন ধীরে ধীরে দেখা যাচ্ছে উপজেলাগুলোতেও।
চট্টগ্রামে করোনা শনাক্তের প্রথম এক মাসে (৩ মে) মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র ৮১ জন। এর মধ্যে মহানগরীর ৫০ জন এবং উপজেলার ৩১ জন। দ্বিতীয় মাসে (৩ জুন) সে সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৩৯৭ জনে। এর মধ্যে মহানগরীর ২ হাজার ৫৮০ জন এবং উপজেলার ৮১৭ জন। কিন্তু চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন প্রদত্ত তথ্য শুক্রবার (১২ জুন) মতে সে সংখ্যাটা ৪৫৯৩ জন। এর মধ্যে উপজেলারই ১৩৯৬ জন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অঘোষিত লকডাউন শেষে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অবাধ যাতায়াতের কারণে উপজেলার বাসিন্দারা কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের শিকার হয়েছেন। যে কারণে শুধু করোনা আক্রান্তের দ্বিতীয় মাসেই ১৪ উপজেলার মধ্যে পাঁচ উপজেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনাকাঙ্কিতভাবে বেড়েই চলেছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের শুক্রবার (১২ জুন) তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে হাটহাজারি উপজেলায় ২৩৮ জন। এরপর রয়েছে পটিয়া উপজেলায় ২১০ জন । এর পরে অবস্থানে রয়েছে সীতাকুণ্ড উপজেলায় ১৬৮ জন। বোয়ালখালী উপজেলায় ১৫৬ জন এবং এর পরের অবস্থানে চন্দনাইশ উপজেলা ১১৯ জন নিয়ে বিপজ্জনক অবস্থানে।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে করোনা পরীক্ষার নয়দিনের মাথায় প্রথম একজন ষাটোর্ধ ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। যা গত ৩ এপ্রিল ৩৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজে (বিআইটিআইডি) এ রোগী শনাক্ত করেন। এর আগে আরও ৫৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। তবে আক্রান্ত ব্যক্তি ছাড়া বাকি সকলের করোনা নেগেটিভ আসে। তবে, প্রথম দিকে ওই রোগী হিস্ট্রি গোপন করলেও পরবর্তীতে জানা যায় সুপার শপে চাকরি করা ছেলের সংস্পর্শেই তিনি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। ধীরে ধীরে এক দুই তিন করে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের শিকার চট্টগ্রামবাসী। সংখ্যাটা এখন সাড়ে চার হাজার ছাড়িয়েছে।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, এখনও চট্টগ্রামে মহানগরীর চেয়ে উপজেলায় করোনা রোগী কম। তাই আমাদের হিসাবে যেসব জায়গায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে সেসব এলাকাকে রেড জোন ধরা হয়েছে। সেই হিসাবে মহানগরী আর উপজেলায় রেড জোন ধরা হয়েছে। জাতীয়ভাবে মন্ত্রণালয়ের রেড জোনের নির্দেশনা এখনও আসেনি। এটার এ-টু-আইয়ের আলাদা নীতিমালা রয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে নির্দেশনা আসবে। তবে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সিটি করপোরেশন জোন এলাকার তালিকা ঘোষণা করবে এবং তারাই বাস্তবায়ন করবে।
হাটহাজারিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কেন বাড়ছে জানতে চাইলে কেউ বলেছেন অসর্তকতা, আবার কেউ বলেছেন প্রচার-প্রচারণার অভাব। আবার কেউ কেউ বলেছেন অসচেতনতার খেসারত দিচ্ছেন হাটহাজারিবাসী।
হাটহাজারির মদুনাঘাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের অফিসার ইনচার্জ জাব্বারুল ইসলাম সিএনএন ক্রাইম নিউজকে গণ সংক্রমন বেশি হবার কারন জানাতে গিয়ে বলেন, শহরতলীর কাছাকাছি উপজেলা হওয়াতে গণ সংক্রমণ একটু বেশি হয়ে গেছে। তাছাড়া চট্টগ্রাম উত্তরজেলার প্রবেশমুখে হাটহাজারির অবস্থান হওয়ায় সংক্রমনের হার বেশি বলে মনে হচ্ছে। সবাইকে বলবো সাবধানে থাকুন-নিরাপদে থাকুন। দুরত্ব বজায় রাখুন।
বিধান বিশ্বাস-নির্বাহী সম্পাদক।