জ্বর ও শ্বাসকষ্টে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় এক কলেজ শিক্ষকের মৃত্যুর পর রাউজানে তার নিজ গ্রামে দাফন করতে নিয়ে যাওয়া হলে গ্রামবাসী তার লাশ দাফন করতে দেয়নি। এমনকি ওই শিক্ষকের স্বজনরাও তার লাশ গ্রহণ করেনি।
বৃহস্পতিবার (১১ জুন) রাত ৮টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে ভর্তির আগেই তার মৃত্যু হয়। এরপর দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় নিজ উপজেলা রাউজানের নোয়াপাড়া এলাকায়। কিন্তু সেখানে তার স্বজনরা লাশটি দাফনের ব্যবস্থা না করে উল্টো ফেরত পাঠায় রাঙ্গুনিয়ায়।
পরে ওই শিক্ষকের লাশ ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় কর্মস্থল রাঙ্গুনিয়ায়। সেখানেও লাশ দাফনের কোনো উপায় না দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন অসহায় পরিবারটির সদস্যরা। খবর পেয়ে গভীর রাতে পুলিশ ও গাউছিয়া কমিটির উদ্যোগে ওই শিক্ষকের লাশ দাফন করা হল।
ঘটনাচক্রে উল্লখ্য, চট্টগ্রামের রাউজানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের দাফনের ঘোষণা দিয়েছেন স্থানীয় সাংসদ এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী। এই কাজের ব্যয়ভারও বহন করবেন তিনি। তাঁর পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গত বুধবার (১০ জুন) সন্ধ্যায় এ ঘোষণা দেওয়া হয়। উপজেলা সদরে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেন্ট্রাল বয়েজ অব রাউজানের কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই ঘোষণা দেন সাংসদ ও রেলপথ মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ফজলে করিম চৌধুরী।
প্রায় ৪০ সদস্যের একটি স্বেচ্ছাসেবী দলের মাধ্যমে কার্যক্রমটি চলবে। এই কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক রাউজান উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও পৌর প্যানেল মেয়র জমির উদ্দিন পারভেজ। তিনি সংবাদ সম্মেলনে সাংসদের পক্ষে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার (১১ জুন) থেকে এই সেবা শুরু হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে রোগীদের পরিবহনসংকট প্রকট হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যাচ্ছে না। এ জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রেখেছেন তাঁরা। রাউজানবাসী বিনা টাকায় এই সেবা নিতে পারবেন। আরও জানানো হয়, এরই মধ্যে রাউজানে করোনাভাইরাস সংক্রমণে মারা যাওয়া মুসলিমদের দাফনের জন্য ৩০ জন এবং হিন্দুদের সৎকারের জন্য ১০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত আছেন। এই কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতা করছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেন্ট্রাল বয়েজ অব রাউজান।
প্রশ্ন উঠেছে নাগরিক সমাজে, সাংসদের এ অর্জনে পানি ঢাললো কারা!! ঘোষনার দুদিনের মাথায় ঘটে গেলো এমন নিদারুন মর্মান্তিক ঘঠনা।
মারা যাওয়া আনোয়ার হোসেন (৫৯) রাঙ্গুনিয়ার সৈয়দা সেলিমা কাদের চৌধুরী ডিগ্রী কলেজে শিক্ষকতা করতেন। এ শিক্ষক রাত ৮টার দিকে জ্বর-শ্বাসকষ্টে মারা যান। গত ৯ তারিখ তিনি নমুনা পরীক্ষা দিলেও এখনও রিপোর্ট আসেনি। তার বাড়ি রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া এলাকায় হলেও তিনি রাঙ্গুনিয়ার মরিয়মনগর ইউনিয়নের পূর্ব সৈয়দবাড়ি গ্রামে ভাড়া বাসায় থাকতেন।
নিজ গ্রাম রাউজানের নোয়াপাড়ায় লাশ দাফন করতে বাধা পেলেও রাঙ্গুনিয়ার পাগলা মামার মাজার প্রাঙ্গনে লাশ নিয়ে অসহায় হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার পরিবারের সদস্যরা। তাদের এই অসহায় অবস্থার খবর পেয়ে এগিয়ে আসে রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশ ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলা গাউছিয়া কমিটি।
এলাকার উদ্যমী তরুণদের সাথে নিয়ে কবর খুড়ে জানাজা নামাজ পড়ে পূর্ণ ধর্মীয় মর্যাদায় দাফন করা হয় এ শিক্ষককে। এই কাজে সার্বিক সহযোগিতা করে মানবিকতার স্বাক্ষর রাখেন এলাকার নেতৃত্ব স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ।
লাশ দাফন না করে নিজ উপজেলা থেকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিন্দার ঝড় উঠে। পাশাপাশি রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশ ও গাউছিয়া কমিটির সদস্যদের মানবিকতার ভূয়সী প্রশংসাও করছেন অনেকে।
রাঙ্গুনিয়া থানার এসআই ইসমাঈল হোসেন জুয়েল জানান, রাউজানে তার নিজ গ্রাম থেকে এই শিক্ষকের লাশ ফেরত পাঠানো হয়েছে খবর পাওয়ার পর রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশ দাফনের দায়িত্ব নেয়। এলাকার তরুণদের সাথে নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তার লাশ দাফন করা হয়েছে।