এক যুগ আগের প্রলয়ঙ্করী অগ্নিচক্ষু সিডরের মতো ভয়াল শক্তিতে ধেয়ে আসছে সুপার সাইক্লোন আম্পান। অবিশ্বাস্য গতিতে ধাবমান বিধ্বংসী ক্ষমতার সাইক্লোনটির মুখ ও স্থলভাগে আঘাতের কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশের সুন্দরবন।
মঙ্গলবার (১৯ মে) শেষ রাত কিংবা আগামীকাল বুধবার নাগাদ আঘাত হানতে পারে বলে জানানো হয়েছে আবহাওয়া অধিদফতরের সর্বশেষ বিশেষ বুলেটিনে।
সুপার সাইক্লোন আম্পানের শক্তি ২০০৭ সালে তাণ্ডব চালানো সিডরের মতো। এটি উপকূলে আঘাত হানলে হতে পারে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি। তার সঙ্গে শরীরিক দূরত্ব ব্যবস্থা ভেঙে পড়লে ছড়াতে পারে করোনার সংক্রমণও।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, অতিসম্প্রতি দেশে আঘাত হানা ঘূণিঝড়গুলোর তুলনায় বেশি শক্তিশালী মনে হচ্ছে আম্পানকে। শক্তি ও গতি-প্রকৃতি পর্যালোচনা করে এ সাইক্লোনকে সিডরের মতো শক্তিশালী বলে মনে করছেন তারা। তবে সুন্দরবন উপকূলে আঘাত হানলে ক্ষয়ক্ষতি হবে বলেও ধারণা তাদের।
আবহাওয়াবিদ ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, এটার শক্তিশালী সিডরের মতো। তবে দেখা যাচ্ছে সুন্দবনের ওপর দিয়ে গেলে কম বাতাস পাব।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, আম্পানের স্থলভাগে আঘাতের কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তের সুন্দরবন অংশ। কেন্দ্রবিন্দু যদি পরিবর্তন না হয়, তাহলে আম্পানে ক্ষতি কম হবে। তবে আঘাতের কেন্দ্রবিন্দু পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পরিবর্তন হয়ে সুন্দরবন ছাড়া দেশের অন্য অংশে আঘাত হানলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি বলেন, সেন্টার যদি সুন্দরবন হয়, তাহলে তো ওই স্পিডে (১৪০-১৬০ কিলোমিটার) কোনো ক্ষতি হবে না। ওই সেন্টার যদি আবার পটুয়াখালী হয়, তাহলে অনেক ক্ষতি হবে। এজন্য আগে লোকেশন ঠিক করতে হবে। সেজন্য লোকেশনকে ফিক্সড (স্থান) করার পরে স্পিডের (ঘূর্ণিঝড়ের গতির) কথা আসবে।
ভারতের বেসরকারি আবহাওয়া পূর্বাভাস সংস্থা স্কাইমেটের প্রধান মহেশ পালাওয়াট বিবিসিকে বলেন, এই শতাব্দীতে প্রাক-মনসুন পর্বে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া এটাই কিন্তু প্রথম সুপার সাইক্লোন। এর আগে ২০০৭ সালের জুনে আরব সাগরে সুপার সাইক্লোন গোনু তৈরি হয়েছিল যেটা পরে ওমানের দিকে সরে যায়।
তিনি বলেন, আম্ফান এর মধ্যেই ঘণ্টায় দেড়শ কিলোমিটারেরও বেশি গতিবেগসম্পন্ন ঝড়ো বাতাস সঙ্গে ‘প্যাক’ করে নিয়েছে। মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এটা একটা ঘূর্ণিঝড় থেকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে, সেটাও একটা রেকর্ড। পালাওয়াট বলেন, উপকূলের কাছাকাছি এলে এই ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা সামান্য কমবে। তবে তার পরও এর বিধ্বংসী ক্ষমতাকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে সুপার সাইক্লোন আম্পান আরও এগিয়ে এসেছে, দুপুর নাগাদ গতিপথ কিছুটা স্পষ্ট হবে। এখনো পূর্বের সংকেতই অব্যাহত আছে, তবে দু-এক ঘণ্টার মধ্যে মহাবিপদ সংকেত আসতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।