চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা উপজেলার কর্ণফুলী থানার বৈরাগ ইউনিয়নের বন্দর গ্রামে, বন্দর সিংহপাড়া সার্ব্বজনীন কালী মন্দিরের পাশে এই লকডাউনের মধ্যেও চলছে সংখ্যালঘু পরিবারের জায়গা দখলের চেষ্টা। সারা বিশ্ব যখন করোনা ভাইরাসের হিংস্র ছোবল থেকে বাঁচতে লড়াই করে যাচ্ছে, এই সূযোগে ভূমি দস্যুদের নির্মম আঘাতে সুমন সিংহ, মৃদুল সিংহ, রায় মোহন সিংহ, কৃষ্ণপদ সিংহ গং আঘাতে জর্জরিত।
শুক্রবার (১৫ মে) সকালে কর্ণফুলী থানার বৈরাগ ইউনিয়নের বন্দর গ্রামের বন্দর সিংহপাড়া সার্ব্বজনীন কালী মন্দিরের পাশে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
গল্পের ভিলেন আনোয়ারার বৈরাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও তার দলবল। সিনেমার গল্পকে বাস্তবেই রূপ দিয়েই তারা জমি দখল করতে সংখ্যালঘুদের উপর ২ দফা হামলা চালিয়েছে।
শুধু তাই নয়, আপোষের নামে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে রুমে তালা লাগিয়ে বেপরোয়া পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে তারা স্থানীয়দের। এ সময় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিল বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। চেয়ারম্যানের সশস্ত্র দলবলের এ হামলায় আহত হয়েছে দুই পুলিশ সদস্য। স্থানীয়দের উপর নির্বিচারে এ হামলার ঘটনায় মামলাও নিচ্ছে না কর্ণফুলী থানা পুলিশ।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, কর্ণফুলী থানার ওসি বলেছেন ভূমিমন্ত্রী নির্দেশ ছাড়া কোন মামলা নেওয়া যাবে না। মন্ত্রী মহোদয় ফোনে বলেছেন, ওনার বাসায় গিয়ে বিষয়টি সমাধান করতে। ওসির নির্দেশনা পেয়ে ভূমিমন্ত্রীর চট্টগ্রাম নগরীর সার্সন রোডের বাসায় দুপুর ২ টা ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা বসে থেকে ভুক্তভোগীদের কেউ মন্ত্রীর দেখা পাননি।
এ সময় মন্ত্রীর বাসার লোকজন ভুক্তভোগীদের বলেন, আপনারা থানায় চলে যান। মন্ত্রী যা বলার ওসিকে বলে দিয়েছেন।
এমন রক্তাক্ত ঘটনার পরও মামলা নিতে থানা পুলিশের গড়িমসির নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা।
উত্তরাধিকার সূত্রে জায়গায় মালিক ও উক্ত ঘটনায় আহত সুমন সিংহ বলেন, বন্দর গ্রামে আমাদের ২১ গন্ডা জায়গার মধ্যে ১৬ গন্ডা জায়গা ইউনিয়ন পরিষদের নামে দান করে দেয় আমাদের পূর্বপুরুষরা। আর ৫ গন্ডা জায়গায় সীমানা বাইরে ছিলো। এখনও পর্যন্ত কোন চেয়ারম্যান এই ৫ গন্ডা জায়গা দাবি করেননি। কিন্তু বর্তমান চেয়ারম্যান আমাদের জায়গাটা দখল করার জন্য উঠেপড়ে লাগে।
আহত কৃষ্ণপদ সিংহ আরও জানান, ইউনিয়ন পরিষদের সীমানা দেয়াল দেয়ার নাম করে তারা এই জায়গা দখলে নিতে চাইলে আমরা বাধা দিই। এ সময় চেয়ারম্যান আমাদের উপর হামলার নির্দেশ দেয়। সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনার পর ফাঁড়ির এসআই পারভেজসহ আরেকজন পুলিশ সদস্য এসে আপোষের কথা বলে। চেয়ারম্যানের নির্দেশেই আমাদের পুলিশ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে চেয়ারম্যানের নির্দেশে তার দলবল আবারও আমাদের উপর হামলা চালায়। এসময় এসআই পারভেজ বাঁধা দিতে চাইলে তাকেও কিল-ঘুষি মারতে থাকে এরা। পরে থানা থেকে পুলিশ এসে আমাদেরকে উদ্ধার করে।
তিনি বলেন, আমাদের অন্তত ৩০ জন আহত হয়। তারমধ্যে দু’জনের অবস্থা খুব খারাপ। তাদের একজন পমিলা (৬০) আরেকজন প্রবাস সিংহ (৪৫)। প্রবাসের এখনও জ্ঞান ফিরেনি। এত লোককে কুপিয়ে রক্তাক্ত করার ঘটনায় কর্ণফুলী থানার ওসি মামলা নেয়নি। ওসি জানিয়েছেন, মন্ত্রী সাহেব নাকি মামলা নিতে মানা করেছেন। এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত কর্ণফুলী থানা মামলা নেয়নি।
কর্ণফুলী থানার ওসি মো. ইসমাইল হোসেনের ভুমিকা প্রশ্নবোধক বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।