বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পলাতক খুনি রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনকে আটক করার খবর পাওয়া গেছে। কলকাতার চব্বিশ পরগনার বনগ্রাম থেকে তাকে আটক করা হয়েছে। গত চল্লিশ বছরের কাছাকাছি তিনি সেখানেই বসবাস করতেন বলে জানা গেছে কলকাতার বনঁগা পুলিশ সূত্রে।
কলকাতা সূত্র জানায় মোসলেহ উদ্দিন বনগ্রামে ডাক্তার দত্ত নামে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক হিসাবে পরিচিত ছিলেন। গাইঘাটার ঠাকুরনগর রেল স্টেশনের পাশে ইউনানী ফার্মেসী নামে তার একটা দোকান ছিল । সম্প্রতি ফাঁসি কার্যকর হওয়া খুনি ক্যাপ্টেন ( বরখাস্ত) মাজেদের সঙ্গেও তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল।
রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের ছেলে সাজিদুল ইসলাম খান বর্তমানে নরসিংদীতে বসবাস করেন। তিনি বলেন, বহু বছর ধরে পরিবারের সঙ্গে তার বাবার কোনো ধরনের যোগাযোগ নেই। তিনি বেঁচে আছেন কিনা তাও তারা জানেন না।
জানা যায়, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন নিজের নাম পরিচয় বদলে ফেলেছেন। তার নতুন নাম রাখা হয়েছে রফিকুল ইসলাম খান। নতুন এ নাম যুক্ত করেই তার পরিবারের সব সদস্য জাতীয় পরিচয়পত্র পান। এমনকি খুনি পিতার নাম বদলে তার সন্তানরা নানা প্রতিষ্ঠানে চাকরি ও ব্যবসা বাণিজ্য করছেন নির্বিঘ্নে। দিব্যি ঘুরছেন দেশ-বিদেশেও।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকারীদের দলে ছিলেন অগ্রভাগে। শুধু তাই নয়, ঠাণ্ডা মাথার এ খুনি জেলহত্যা মামলারও আসামি মোসলেহ উদ্দিনের পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ের জাতীয় পরিচয়পত্রে সবকিছু ঠিক থাকলেও শুধু পিতার নাম বদল করা হয়েছে। মোসলেহ উদ্দিনের নামের জায়গায় লেখা হয়েছে রফিকুল ইসলাম খান।
মোসলেহ উদ্দিন ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর নরসিংদী জেলার শিবপুরের দত্তেরগাঁও এলাকায় বাড়ি করে স্থায়ীভাবে বসবাস করছিলেন। ’৯৬ সালের আগ পর্যন্ত কোনো সরকারই মোসলেহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে তদন্তের উদ্যোগ নেয়নি।
এমনকি বিএনপি সরকারের সময় তার বাড়িতে সার্বক্ষণিক পুলিশি নিরাপত্তা থাকত। ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্ত শুরু হলে তার বাড়িসহ বেশকিছু সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়। একপর্যায়ে খুনি রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন পালিয়ে যান। তার পরিবারের সদস্যরাও দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েন। অনেকেই নিরাপদ স্থানে আত্মগোপনে চলে যান।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামিদের কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার কয়েক বছর পর তাদের জন্য পরিস্থিতি কিছুটা অনুকূলে আসে।
এ সুযোগে মোসলেহ উদ্দিনের পরিবারের সদস্যরা ফের নরসিংদী এলাকায় ফিরে আসেন। কিন্তু এবার মোসলেহ উদ্দিনের ৫ ছেলে ও এক মেয়ের সবাই কৌশলে পিতার নাম বদলে নিতে সক্ষম হন। জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে শুরু করে সরকারি সব ধরনের কাগজপত্রে তাদের পিতার নাম হয়ে যায় রফিকুল ইসলাম খান।
নতুন পরিচয়ে তারা সমাজের মূল ধারায় মিশে যান খুব সহজে। চাকরি ও ব্যবসা- বাণিজ্য শুরু করেন নতুন করে। মোসলেহ উদ্দিনের বড় ছেলে সাজিদুল ইসলাম খান নরসিংদী শহরের টাউন হল মোড়ে হোটেল ব্যবসা করছেন। ২য় পুত্র শফিকুল ইসলাম খান চাকরি নেন জেনারেল ফার্সাসিটিক্যালস কোম্পানিতে।
৩য় ছেলে মাহমুদুল ইসলাম খান সিনিয়র আরএম পদে চাকরি পান অ্যালকো ফার্মাসিটিক্যালসে। ৪র্থ পুত্র মজিদুল ইসলাম খান পরিবারিক সম্পত্তি দেখাশোনা করেন এবং পঞ্চম পুত্র মহিদুল ইসলাম খান নদী কনস্ট্রাকশন লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন উঁচু পদে। মোসলেহ উদ্দিনের একমাত্র মেয়ে সানাজ খানের বিয়ে হয় নরসিংদীতেই। তার স্বামী আবদুল মান্নান ভূঁইয়া এখন দক্ষিণ কারারচর মৌলভী তোফাজ্জল হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।