দেশে এত করোনার প্রকোপ গোটা বিশ্বে যখন মৃত্যুর মিছিল ও শোকের মাতম, তখন কীভাবে হাটহাজারি থানার অন্তর্গত নজু মিয়া হাট কাপ্তাই রোডের দুই পাশে বসানো হয় এবং লোকে লোকারণ্য বাজার। সামাজিক দুরত্বের বালাই নাই। কে শুনে কার কথা। যেন সমস্ত দায় প্রশাসনের।
যখন সরকারি হিসাব মতে এদেশে করোনায় ঘোষিত মৃতের সংখ্যা ৮৪ এবং আক্রান্তের সংখ্যা ২১৪৪। বিশ্বজুড়ে জনসমাগম এড়িয়ে চলার আহ্বান সবার কানে পৌঁছে গেছে, হুঁশিয়ারি বাণী যখন তুঙ্গে, তখন কীভাবে এত বড় একটি হাট যেখানে আনুমানিক রাউন্ড দ্য ক্লক ১ হাজার লোকের সমাগম হয়, সেখানে কেমন করে এত বড় একটা হাট বসলো? বাঙালির হুঁশ আসলে কবে হবে? কবে জাগবে আমাদের চৈতন্যবোধ? যেখানে আমার দেশের সরকার জাতীয় স্বার্থে এবং এই কঠিন দুর্যোগ মোকাবিলায় দেশের সকল স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দিয়েছে শুধু মানুষের সামাজিক সংস্পর্শ রোধ করেতে এবং করোনা নামক ভয়াবহ ভাইরাসের দ্রুত বিস্তার রোধ করতে, সেখানে আমরা কেন আজও থামছি না জনসমাগম থেকে।
আইন করে, লাঠিচার্জ করে, সেনা মোতায়েন করে কন্ট্রোল না করলে কি আমাদের পরিবর্তন সম্ভব নয়? আমাদের সিভিক সেন্স কবে যে ডেভেলপ করবে! এই প্রাদুর্ভাবের ভয়াবহতা কি বাঙালির আজও বোঝার বাকি? আমাদের বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপঠে ৫৩ জেলায় করোনা ছড়িয়ে পড়েছে, এঅবস্থা থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া কী উচিত নয় !!
হাটহাজারির শিকারপুর ইউনিয়নে শতবর্ষী একটি হাট যার নাম নজু মিয়া হাট বাজার। ঐতিহ্যবাহী এই বাজারটির অনেক বছরের পুরনো। বাজারটি মুলত শিকারপুর-বুড়িশ্চর দুই ইউনিয়নের প্রান বলা চলে। সবাই সপ্তাহে রবিবার ও বুধবার এখান থেকে কাচা বাজারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যপন্য সংগ্রহ করে থাকেন।
শিকারপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দীকি এবং বুড়িশ্চর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রফিকও এক বাক্যে স্বীকার করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মতে সামাজিক দুরত্ব এই বাজারে লংগিত হচ্ছে। জনসমাগম বেশি।
দুই চেয়ারম্যান বেশ কিছুক্ষন ধরে মাইকিং করেন সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার জন্য।
মদুনাঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জাব্বারুল নিজে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে শতচেষ্টা করেও সামাজিক দুরত্ব নিয়ন্ত্রন করতে ব্যর্থ হন। অবশেষে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স এসে বাজার উটিয়ে দিতে বাধ্য হন।
মদুনাঘাট তদন্ত কেন্দ্রর এস আই শামসুদ্দোহা ও এএস আই আবদুল বাতেন সিএনএন ক্রাইম নিউজকে বলেন, মহামারি করোনা সারাদশে ছড়িয়ে পড়েছে, এ সময় বাজারটা বসানো ঠিক হয়নি। জনসাধারনের কাছে সচেতনতা নেই। আমরা দেখলাম সোস্যাল ডিজটেন্স বলতে যা বোঝায় কিছুই নেই। এ বাজার হুমকি স্বরুপ।
মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায় এলাকাবাসীর মাঝে। বেশিরভাগ এলাকাবাসী চায় বাজার সাময়িক বন্ধ রাখাই সবার জন্য ভালো। যুক্তিতে বলেন, ভ্যানগাড়ীতে কাঁচা বাজার ঘরের দরজায় পাওয়া যাচ্ছে তবে কার স্বার্থে এ বাজার? বাজারে আবার হাসিল (বাজার ইজারাদার নেয়) উটানো নিয়েও কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এখন প্রশ্ন হলো শত ঐতিহ্যের ধারক-বাহক এ বাজারটি দেশের অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখছে । কিন্তু যে ভয়াবহ সংকট আমাদের মাথার ওপর শিরে সংক্রান্তি হিসেবে উপস্থিত হয়েছে, সপ্তাহের দুদিন যদি এত লোক সমাগম হয় এ বাজারে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সমবেত ক্রেতা-বিক্রেতার এই যে এক বিশাল সম্মিলন, তা থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং তা ধীরে ধীরে গোটা দেশে প্রসার রোধে এই বাজারটি কি সাময়িক বন্ধের যৌক্তিক দাবি রাখে না?