নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে ডাকা হরতালে উত্তাল ত্রিপুরায় জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় আক্রমণের লক্ষ্য হয়ে উঠল অ-জনজাতি মানুষ।
উত্তর ত্রিপুরা জেলার কাঞ্চনপুরে উন্মত্ত হরতাল সমর্থকদের হঠাতে পুলিশকে শূন্যে ১০ রাউন্ড গুলি ছুড়তে হয় বলে জানান এসডিএম অভেদানন্দ বৈদ্য। কাঞ্চনপুরের আনন্দবাজার এলাকায় আতঙ্কিত অ-জনজাতি বাসিন্দারা বাড়ি ফিরতে না পেরে থানায় এসে আশ্রয় নেন। দশদা স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন ৭০টি পরিবার। তাঁদেরকে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে হরতাল সমর্থকরা।পাশাপাশি, ধলাই জেলার মনুঘাট ও ৮২মাইল বাজারের বিভিন্ন দোকানে আগুন লাগায় হরতাল সমর্থকরা। ভাঙচুর করে লুটপাট চালায় তারা। তাদের আক্রমণে কৃপাসিন্ধু চক্রবর্তী নামে এক ব্যবসায়ী জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আগরতলা শহরের উত্তর গেট এলাকায় হরতল সমর্থকরা অবরোধে নামে। পুলিশ শতাধিক অবরোধকারীকে গ্রেফতার করেছে। কোনও রকম গুজব যাতে না ছড়ায় তার জন্য ত্রিপুরায় মোবাইল ইন্টারনেট এবং এসএমএস পরিষেবা আগামী ৪৮ ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার।
এ দিন সকাল থেকেই সমর্থকরা হরতাল সফল করতে তৎপর হয়ে ওঠে। বিভিন্ন স্থানে জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়। অবরোধ করা হয় রেল লাইন। যদিও হরতালের কারণে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল আগেই ট্রেন চলাচল বাতিল করে দেয়। তবে বেলা বাড়তেই অশান্তির শুরু। গোলমাল ছড়াতে থাকে মূলত উত্তর ত্রিপুরা, ধলাই ও পশ্চিম ত্রিপুরার জনজাতি অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে। সেখানে বিপর্যস্ত হয়ে যায় জনজীবন।
ধলাই জেলার লংতরাই ভ্যালির ৮২মাইল বাজারে ব্যবসায়ীদের দোকানপাট বন্ধ করার জন্য প্রথমে হুমকি দেওয়া বলে জানান এক ব্যবসায়ী। পরে তারা ৩২টি দোকানে ভাঙচুর চালায়। বাজারে আগুন লাগায়। প্রাণ বাঁচাতে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। আগুন লাগানো হয় একাধিক মোটরসাইকেলে। পুলিশ জানিয়েছে, বেশ কিছু মোটরসাইকেল ভাঙচুরও করা হয়। ফল ব্যবসায়ী কৃপাসিন্ধু চক্রবর্তীকে হরতাল সমর্থকরা প্রচণ্ড মারধর করে। তাঁর মাথায় দায়ের কোপ মারা হয়। অন্য দিকে, মনুঘাট বাজারেও বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জখম হন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। পরে হামলা কারীদের হঠাতে পুলিশ লাঠি চালায় বলে জানান ধলাইয়ের এসপি কিশোর দেববর্মা।উত্তর জেলার কাঞ্চনপুরে এসডিএম অফিসের সামনে পথ অবরোধ করে হরতাল সমর্থকরা। বেলা দুটো পর্যন্ত অফিসে কেউ ঢুকতে পারেননি। লালঝুরি, দশদা এবং আনন্দবাজার থেকে কাঞ্চনপুরমুখী সমর্থকদের পুলিশ বাধা দেয়। এরপরেই তারা লাঠি, টাঙি, দা’ নিয়ে নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে। কাঞ্চনপুর, দশদা ও আনন্দবাজার এলাকায় তাণ্ডব শুরু করে তারা। দোকানপাট, গাড়ি ভাঙচুর করে। বাজারে ঢুকে তারা সমস্ত দোকানপাট তছনছ করে দিয়েছে। তাদের আক্রমণে ১৩ জন জখম হয়। কয়েকটি গাড়িতেও তারা আগুন ধরায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ, টিএসআর এবং কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী নিয়ে রাস্তায় নামেন কাঞ্চনপুরের এসডিএম অভেদানন্দ বৈদ্য।
নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে তারা ইট, পাটকেল, পেট্রল বোমা ছুড়তে শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ শূন্যে দশ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। কাঞ্চনপুর এবং আনন্দবাজার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। পাশাপাশি, সিপাহিজলা জেলার দেওয়ানবাজারে বন্ধ সমর্থকদের ছোড়া কাঁচের বোতল, গুলতি এবং ইটপাটকেলের আঘাতে তিনজন পুলিশ কর্মী জখম হন। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। খবর-আনন্দবাজার পত্রিকা।
সিএনএন ক্রাইম