জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস বলেছেন, বিশ্বজুড়ে কীভাবে জৈব-সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটতে পারে, তা দেখার সুযোগ করে দিয়েছে করোনাভাইরাস মহামারী।
বাংলাদেশের স্থানীয় সময় শুক্রবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ এক বৈঠকে এমন সতর্কবার্তা দিয়ে সংস্থাটির মহাসচিব বলেছেন, মহামারীর চেয়েও শক্তিশালী হয়ে উঠা করোনাভাইরাস নিয়ে এখন পৃথিবীর প্রায় সব দেশই ব্যস্ত। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে জঙ্গি হামলা চালাতে পারে চরমপন্থীরা। এতে বহু অসহায় মানুষের প্রাণ যেতে পারে। তাতে আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে বিশ্বাবাসীর লড়াই।
জাতিসংঘ মহাসচিবের এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। তিনি যেদিন তার শঙ্কার কথা বলছেন, ঠিক তার দুই সপ্তাহ আগেই আমরা আফগানিস্তানে একটি শিখ মন্দিরে বড় ধরনের জঙ্গি হামলা হতে দেখেছি। রাজধানী কাবুলের একটি জনবহুল এলাকায় চালানো সেই হামলায় নিহত হয় অন্তত ৫ জন নিরীহ মানুষ। যারা মন্দিরে উপাসনারত অবস্থায় ছিলেন।
অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে সেখানে বেশ কিছুদিন ধরেই যুদ্ধবিরতি চলছে। তার মধ্যেই দেশটির সংখ্যালঘুদের উপর প্রথমে আত্মঘাতী হামলা চালান হয়। পরে পাশেই লুকিয়ে থাকা বন্দুকধারীরা গুলি চালাতে শুরু করে। যুদ্ধবিরতির মধ্যে চলা এই হামলাকে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশ খুবই গুরুত্বের সাথে নিয়েছে। এর পেছনের কারণ খুঁজছে তারা।
জঙ্গি হামলার বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের বক্তব্যে সবচেয়ে ভয়ের বিষয় হলো- সম্ভাব্য হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র নিয়ে। কেননা গত কয়েক দশক ধরে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো হামলায় প্রচলিত অস্ত্র ব্যবহার করে এসেছে। কিন্তু অ্যান্তনিও গুতেরেসের ধারণা, জঙ্গিরা এখন প্রাণঘাতী জীবাণু অস্ত্র হস্তগত করে তা দিয়ে হামলা চালাতে পারে। যা করোনাভাইরাসের মতোই পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন,এটা জাতিসংঘের নিজেরই অস্তিত্বের লড়াই। আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার বড় হুমকি এই মহামারী। এতে পরিস্থিতিকে সামাজিক অস্থিরতার দিকে নিয়ে যাবে। সহিংসতা বাড়বে। যাতে রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সক্ষমতা খর্ব হয়ে যেতে পারে।
তার এ আশঙ্কাকে হালকা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশ গত কয়েক বছর ধরে জঙ্গিদের বেশকিছু ভয়াবহ হামলা দেখেছে। যার মধ্যে রাজধানীর হলি আর্টিজান বেকারির রক্তাক্ত হামলাও রয়েছে। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাল্টা প্রতিরোধের মুখে এদেশে জঙ্গিরা এখন অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। তারপরও বিষয়টা খতিয়ে দেখতে হবে।
যদিও আজ শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নতুন এক নির্দেশনায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি সাধারণ ছুটি চলার সময়ে ব্যাংক, বীমা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শপিংমলসহ গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রধানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নিশ্চয়ই তাদের কাছে কোনো গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে।
আ-রা মনে করি, জঙ্গি হামলার মতো স্পর্শকাতর বিষয় হালকা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। তাতে বড় ধরনের ক্ষতির মুখোমুখী হতে পারে দেশ ও জাতি। এ জন্য সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও চোখ-কান খোলা রাখতে হবে।