করোনা ভাইরাসের ভয়াল থাবায় বিশ্বজুড়ে যখন ইয়া নাফসি, ইয়া নাফসি অবস্থা, ঠিক তখন আশার বাণী শুনিয়েছেন ইসরাইলের বিজ্ঞানীরা। তারা বলেছেন, আর দু’এক সপ্তাহের মধ্যে তারা করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন বা টিকা হাতে পেয়ে যাবেন। যদি এ দাবি সত্যি হয়, তাহলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য অখন্ড গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে বিজ্ঞানীদের কমপক্ষে ২০টি দল। কারো আবিষ্কারকেই এখন পর্যন্ত স্বীকৃতি দেয়া হয় নি। খবর অনলাইন জেরুজালেম পোস্ট।
একবার এই ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলে তা নিয়ন্ত্রণমুলক প্রক্রিয়া ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বাজারে আসতে কমপক্ষে ৯০ দিন বা প্রায় তিন মাস সময় নেবে। ইসরাইলের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী ওফির আকুনিসের মতে, নতুন করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রথম ভ্যাকসিন বা টীকা আবিষ্কারের জন্য দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন ইসরাইলের বিজ্ঞানীরা।
তিনি জানিয়েছেন, যদি সব কিছু পরিকল্পনামতো অগ্রসর হয় তাহলে আগামী দু’এক সপ্তাহের মধ্যে এই টীকা প্রস্তুত করা সম্ভব হবে এবং পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে তা বাজারে আসবে।
একই কথা বলেছেন, দ্য গ্যালিলিও রিসার্স ইন্সটিটিউট বা এমআইজিএএল বলে পরিচিত প্রতিষ্ঠানের গবেষক ড. চেন কাটজ। তিনি জেরুজালেম পোস্টকে বলেছেন, আমরা যে নতুন সিকুয়েন্স পেয়েছি সেটা শুধু এডজাস্ট বা সমন্বয় করার বাকি। ভ্যাকসিন আবিষ্কারের মধ্য পর্যায়ে আমরা। আশা করছি আগামী দু’এক সপ্তাহে এই টীকা আমাদের হাতে আসবে।
ইসরাইলের গ্যালিলিতে অবস্থিত এমআইজিএএল-এর বিজ্ঞানীদের এই গবেষণাকে অভাবনীয় সাফল্য আখ্যায়িত করে তাদেরকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মন্ত্রী আকুনিস। তিনি বলেছেন, আমি আশা করছি এই প্রক্রিয়া আরো দ্রুতগতিতে অগ্রসর হবে। বিশ্বজুড়ে কভিড যে ভয়াল থাবা বিস্তার করেছে তার বিরুদ্ধে আমরা আমাদের জবাব দিতে পারবো।
বায়োটেকনোলজি গ্রুপের নেতা ড. চেন কাটজ বলেছেন, আমাদের মূল ধারণা ছিল একটি টীকা তৈরির প্রযুক্তি তৈরি করা। তবে সেই টীকা সুনির্দিষ্ট কোনো ভাইরাসের জন্য ছিল না। নতুন একটি প্রোটিন ভেক্টরের ওপর ভিত্তি করে নতুন এই টীকার বৈজ্ঞানিক কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ড. চেন বলেছেন, এক্ষেত্রে আমরা মডেল হিসেবে করোনা ভাইরাসকে বেছে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিই। আমাদের প্রযুুক্তি যে কাজ করছে তা প্রমাণ করতে এটা করা হয়। বিজ্ঞানীরা বর্তমান বিশ্বে মহামারি সৃষ্টিকারী নোভেল করোনা ভাইরাসের ডিএনএ (ডিঅক্সি রাইবো নিউক্লিক এসিড)-এর সিকুয়েন্স বের করেছেন। এমআইজিএএল-এর বিজ্ঞানীরা এর ওপর পরীক্ষা চালিয়েছেন এবং তারা দেখতে পেয়েছেন যে, পোল্ট্রিতে যে করোনা ভাইরাস আছে তার সঙ্গে মানুষের দেহের করোনা ভাইরাসের জেনেটিক গঠনে খুব বেশি মিল রয়েছে। তা ছাড়া এই ভাইরাসের সংক্রমণের ধরণ একই রকম। ফলে বিজ্ঞানীরা মানুষের জন্য খুব অল্প সময়ের মধ্যে কার্যকর একটি টীকা আবিষ্কারের পথ পেয়ে যান।নতুন এই টীকা উদ্ভাবনের জন্য দায়িত্ব এমআইজিএএলের। কিন্তু রেগুলেটরি প্রক্রিয়া, যেমন ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ও ব্যাপক ভিত্তিক উৎপাদনের জন্য বেশ কিছুটা সময় প্রয়োজন হবে। কিন্তু এসব প্রক্রিয়া যেন খুব দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা হয় এ জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী আকুনিস। ফলে যত দ্রুত সম্ভব মানুষের জন্য এই টীকা তারা বাজারে আনতে চান।