করোনা সংক্রমন এড়াতে লকডাউন চলমান থাকায় থেমে গেছে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনের চাকা। ঘরের বাইরে বেরিয়ে নিত্য দিনের মত শ্রম বিক্রী করতে না পারায় পরিবার পরিজন নিয়ে খেটে খাওয়া এসব মানুষেরা রান্নার চুলা জ্বালাতে যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখন প্রধানমন্ত্রীর খাদ্য সহায়তার ঘোষণা এসব মানুষের জীবনে নতুন আলোর সঞ্চার করেছে।
ইতোমধ্যে দরিদ্র শ্রেণির মানুষগুলো তিন বেলার পরিবতর্তে দুই বা একবেলা আহার করতে শুরু করেছেন। নিম্ন মধ্যবিত্তরা অন্যের কাছে হাত পাততে না পেরে পড়েছেন উভয় সংকটে। আপদকালীন সংকট সামাল দিতে সরকার ও শাসক দলের ত্রাণ বিতরণের নির্দেশনা থাকলেও মাঠে নেই অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি। এরই মধ্যে অভিযোগ উঠেছে, যতটুকু দান-ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে তার সবই মুখ দেখে। আবার যেখানে যেখানে খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে তা নিয়েও চলছে দেধারসে ফটোসেশন।
দেশের বৃহৎ অংশের এক শ্রেনীর মানুষ উপার্জনহীন হয়ে পড়ায় থেমে যায় নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনের চাকা। নিভে যায় তাদের রান্নার চুলা। ক্ষুধার্ত এ মানুষগুলোর বাড়ী বাড়ী সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়ার ঘোষনা থাকলেও নেতার সাথে সমাগম হয়ে মানুষের বাড়ী বাড়ী খাদ্য সহায়তার প্যাকেজ নিয়ে ক্ষুধার্ত মানুষগুলোকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে দাড় করিয়ে এক শ্রেনীর সেলফিবাজরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতার পক্ষে ত্রান বিতরনের প্রচার চালাচ্ছে। ফেসবুক খুললেই ক্ষুধার্ত মানুষদের সাথে নেতার অনুসারীদের ছবি দেখা যাচ্ছে, একটি খাদ্য প্যাকেজ বিতরন করতে দেখা যাচ্ছে ১০-১৫জনকে
প্রযুক্তির কল্যানে রাতারাতি হিরো বণে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম সোস্যাল মিডিয়া। আর এ মিডিয়াতে ত্রান বিতরনের যতমুখী ফটোসেশন করা ছবি আপলোড করা হচ্ছে কিন্তু একবারও ভাবছেনা যারা হাত পেতে নিচ্ছেন তাদের অবস্থানের কথা। অমুক ভাইয়ের পক্ষ থেকে, তমুক ভাইয়ের পক্ষ থেকে এসব যেন ত্রান বিতরনের বিজ্ঞাপন। অবশ্য প্রচারেই প্রসার এমন্ত্রে চলছে বিশ্ব।
চট্টগ্রামের ১৬ জন সংসদ সদস্য, একজন মেয়র, ৪১ জন কাউন্সিলর, একজন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ১৫ জন উপজেলা চেয়ারম্যান এবং এসব এলাকার ইউপি চেয়ারম্যানরাতো রয়েছেন। তারা সবাই জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি হলেও হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া তাদের অনেকেই করোনা সংকটের সময় মাঠে নেই। দেশব্যাপী ভাইরাস আতঙ্কের পর থেকে অনেকের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। এসব নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা প্রশ্ন ও ক্ষোভ দেখা গেছে।
কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নিজ ও ব্যক্তি উদ্যোগে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছে। এছাড়া চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালামের উদ্যোগে সীমিত পর্যায়ে দ্ররিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার মানুষের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত ২০ মেট্রিক টন চাল ইতোমধ্যে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিতরণ শুরু হয়েছে। সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন তার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে ৪১ ওয়ার্ডের অসচ্ছল মানুষের মধ্যে বিতরণ করছেন চাল, ডাল, আলু, তেল, লবণসহ নানা খাদ্যদ্রব্য।
খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে মুখ চিনে চিনে। যারা ওই জনপ্রতিনিধির কাছের লোক, তারাই নামের তালিকা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে খাদ্য সামগ্রী। অভিযোগ উঠেছে, জনপ্রতিনিধির কাছের লোক না হলে তাদের ভাগ্যে ত্রাণ জুটছে না।
প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, কেউ যদি এই দু:সময়ে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে দুর্নীতি করে তিনি কাউকে ছাড় দিবেন না। তাই সকলে সততার সাথে এই খেটে খাওয়া অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবে সে আশা করছি।
ফটোসেশন নয়, খেটে খাওয়া মানুষদের পাশে দাড়াঁনো এখন দল-মত নির্বশেষে সময়ের দাবি। যারা হাত পেতে ত্রাণ নেন তাদের আবেগে আঘাত করবেেননা। মানবতার সেবায় এগিয়ে আসুন, ফটোসেশনে নয়।
অনেকেই খাদ্য সামগ্রী নিয়ে ঘরে ঘরে যাচ্ছেন কিন্তু প্রচার বিমুখ। দান হয় এভাবে ডান হাতে দেওয়ার পর বাম হাত যেন জানতে না পারে।
কর্তৃপক্ষ একটু ভেবে দেখবেন। ত্রান নেওয়া দরিদ্র জনগোষ্টির ইচ্ছার বিরুদ্ধে ছবি তোলে তাদের আবেগ কিংবা সামাজিক মান-মর্যদার সাথে কতটুকু শোভনমূলক আচরন করা হচ্ছে!! রাজনীতিক বৃন্দ একটু ভেবে দেখবেন।