করোনা যখন প্রতিটি এলাকা বা মহল্লায় হানা দিচ্ছে ঠিক তখনই বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যরা বাড়িতে বাজার পৌছে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো। নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে জনগণকে ঘরে রাখার চেষ্টার অংশ হিসেবে বাসায় বাজার পৌঁছে দিচ্ছে পুলিশ। পাশাপাশি সেনাবাহিনীও বিভিন্নভাবে কোয়ারেন্টিনে থাকা লোকদের ফলমুল দিচ্ছেন এবং সাহায্য সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
মানবতার দৃষ্টিতে পটুয়াখালীতে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ইতালি প্রবাসীর বাসায় বাজার করে দিল পুলিশ। রাতে চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটা এলাকার একটি বাসায় বাজার পৌঁছে দেয় কোতোলি থানা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) দুপুরে শহরের কলেজ রোর্ড এলাকায় ইতালি প্রবাসীর বাড়িতে তালিকা অনুযায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দিয়েছেন সদর থানা পুলিশের সদস্যরা। রাতে চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটা এলাকায় একটি বাসায় বাজার পৌঁছে দেয় কোতোলি থানা পুলিশ।জনগণকে বাসায় রাখতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন মাইকিং করছে জনগণকে বাসায় থাকতে। নগরীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশ মাইকিং করে বাসায় থাকার অনুরোধের পাশাপাশি প্রয়োজনে পুলিশকে ফোন করারও অনুরোধ জানানো হয়।
কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, আমরা সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মাইকিং করেছি। যেন জনগণ নিজেরে ঘরে থেকে কোন প্রয়োজন থাকলে পুলিশকে জানায়। সেজন্য আমরা থানার নাম্বারও বলে দিয়েছি।
মাইকিং শুনে রাতে এক মহিলা ফোন করে আমাদের কাছ থেকে সহযোগিতা চাইলে আমরা বাজার পৌঁছে দিয়ে আসি এবং তারা পাঠানো বাজারের টাকা পরিশোধ করে।
বাজারের জন্য ফোন করা রেবেকা সুলতানা নামে ওই গৃহবধূ বলেন, সকাল থেকে পুলিশ মাইকিং করেছে কাউকে বাসা থেকে বের না হওয়ার জন্য। আবার বাসা থেকে বের হতোও ভয় লাগছিল। সেজন্য ফোন করে পুলিশের সহায়তা চেয়েছিলাম।
রাত আটটার দিকে ফোন করে আমাদের চাহিদার কথা বলার খুব অল্প সময়ের মধ্যে বাজার করে আমাদের ফোন করে ঠিকানা জানতে চায় থানা। ঠিকানা বলার পর পুলিশ সদস্যরা ১১’শ টাকার বাজার নিয়ে হাজির হয়।
পটুয়াখালী সদর থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান ইতালি প্রবাসীর বরাত দিয়ে বলেন, মুঠোফোনে সকালে এক ইতালি প্রবাসী জানান, চারদিন হলো তিনি দেশে এসেছেন। হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। তার বাসায় খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। তিনি সচেতন তাই দেশে ফিরেই হোম কোয়ারেন্টাইন মানছেন।ওসি আরও বলেন, তার বাসায় খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। তিনি বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখেছেন পুলিশ খাবার পৌঁছে দিচ্ছে। তিনি তো উন্নত বিশ্ব থেকে এসেছেন, বাংলাদেশে উন্নত বিশ্বের মতো ইকুইপমেন্ট নেই। তাই তিনি থানায় কল দিয়ে বিষয়টি জানানোর পর তার খাদ্য পণ্যের লিস্ট অনুযায়ী ওইসব পণ্য কিনে তার বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
এদিকে সকাল থেকে রাঙামাটি শহর ঘুরে দেখা যায়, গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার তদারকি করছেন।
এছাড়া সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন স্থানীয় প্রশাসনসহ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। হাট-বাজার থেকে শুরু করে সব জায়গায় যাতে একের অধিক মানুষ একসঙ্গে থাকতে না পারে সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি করছেন।
এদিকে রাঙামাটিতে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা মানুষদের কাছে সেনাবাহিনীর উদ্যোগে ফলমূল পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা মানুষদের কষ্ট লাগবে রাঙামাটি রিজিয়ন থেকে এই শুভেচ্ছা উপহার দেয়া হচ্ছে বলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, আমরা বাজারে অ-প্রয়োজনে লোকজন ভিড় করছে কিনা এবং যেসব দোকান বন্ধ রাখার কথা ছিল সেগুলো বন্ধ আছে কিনা এবং সঙ্গে সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার তদারকিও করেছি।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পল্লব হোম দাশ জানিয়েছেন, শহরের নতুন জালিয়াপাড়া এলাকায় ভারত থেকে এক লোক এসেছেন; তিনি হোম কোয়ারেন্টিনে থাকছেন কিনা সেটা দেখতে গিয়েছিলাম এবং আগামী ১৪ দিন কোনও ভাবেই ঘর থেকে বের না হতে বলা হয়েছে। ঐ এলাকায় সকলকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে থাকার পরামর্শও দিয়েছি।