চট্টগ্রামেের লোকজন মেঝবানী কিংবা ভোজন বিলাসের জন্য খুবই প্রসিদ্ধ। দুর্ভাগ্য হলেও সত্যি এ চরম মুহুর্ত্বে বিয়ে, মেঝবানী ছাড়াও শতশত লোকের গণজমায়েত করে অনুষ্টান বর্জন করার মত বোধোদয় আমাদের হচ্ছেনা। নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছিনা।
করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে এক শ্রেণির মানুষের কাণ্ড-জ্ঞানহীন আচরণ। গত এক মাসে কতজন করোনা ভাইরাস সংক্রমিত দেশগুলো থেকে বাংলাদেশে এসেছে, তাদের কতজন ওই ভাইরাস বহন করে এনেছে বা এখনও বহন করছে, তাদের স্বজন-বান্ধবরা ইতোমধ্যে কতজনকে সংক্রমিত করেছে, সেটা আমরা জানি না। কারণ সম্ভাব্য যারা ভাইরাস বহন করতে পারে, তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা থাকলেও তারা মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, তাদের আত্মীয়-স্বজন-বন্ধুবান্ধবরা বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন না এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করছেন না। অনেক ব্যক্তিই অকল্পনীয় ও অমার্জনীয় দায়িত্ববোধহীনতার পরিচয় দিয়েছেন এবং দিয়ে যাচ্ছেন। এই দায়িত্বহীনতা এক বিপুল বিপদের সঙ্কেত বহন করছে।
করোনা ভাইরাস কিংবা কোভিড-১৯’এর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সংগ্রামে প্রশাসনের দায়িত্ব প্রচুর। চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদেরও। কিন্তু এই দুর্বিপাক রোধ করতে তাদের প্রাণপাত চেষ্টাও বিফল হতে পারে, যদি না নাগরিকেরা নিজেদের দায়িত্ব যথাযথ পালন করে।
দুর্ভাগ্য, আমাদের দেশের নাগরিকদের মধ্যে সেই সচেতনতার অভাব প্রকট। এমনকি বিপর্যয়ের এই চরমলগ্নেও। প্রতি দিনই সংবাদ আসছে, কেউ কোয়ারেন্টাইন এড়িয়ে পালিয়ে যাচ্ছে, সংক্রমিত অবস্থায় কেউ গণপরিবহণ ব্যবহার করেছে, কেউ আবার স্বাস্থ্য পরীক্ষাতেই নারাজ। যারা এমন দায়িত্বজ্ঞানহীনতার প্রমাণ দিচ্ছে, তাদের বেশির ভাগই প্রথাগত অর্থে উচ্চশিক্ষিত, অনেকেই সমাজের উঁচুতলার বাসিন্দা। তাদের শুধু এই বোধটুকু নেই যে সংক্রমিত অবস্থায় তারা যদি স্বাস্থ্যবিধি না মানে, তবে আরও অজস্র মানুষকে তারা বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
এটা শুধু স্বার্থপরতা নয়, নিতান্তই কাণ্ড-জ্ঞানহীন আচরণ। চরম স্বার্থপর মানুষও জানে যে, স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর আয়তন সীমিত, একটি নির্দিষ্ট সীমার অধিক চাপ বহনে সেই পরিকাঠামো অক্ষম। নিজে সংক্রমিত অবস্থায় অনেকের সংস্পর্শে এলে তাদের সংক্রমণের সম্ভাবনাও বাড়বে, সীমিত স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উপর চাপ বাড়বে। ফলে, ওই স্বার্থপর মানুষের নিজের যথাযথ স্বাস্থ্য পরিষেবা পাবার সম্ভাবনা কমবে। অতএব সংক্রমিত হলে স্বার্থবোধসর্বস্ব মানুষেরও চেষ্টা করা উচিত, যাতে অন্যদের মধ্যে সংক্রমণ না ছড়ায়।
স্থাানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে সবাই সচেতনতা নিয়ে সাধারন জনগণের মাঝে বিভিন্ন প্রচার প্রচারনা চালাচ্ছেন এত কিছুর পরও সাধারন মানুুষ নির্বিকার।
হাটহাজারি উপজেলার ইউএনও রুহুল আমিন দিনরাত খবরা-খবর রাখছেন কোথায় কি হচ্ছে, যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন পাবলিক সার্ভিস দেওয়ার জন্য। কিন্তু কি করে সম্ভব একজন ইউএনও রুহুল আমীনের পক্ষে একটি উপজেলা, একটি জেলা সর্বোপরি একটি দেশকে মহামারি থেকে রক্ষা করা। প্রয়োজন আমাদের সচেতনতা। নিজেরাই নিজেকে রক্ষা করতে হবে।
হাটহাজারি উপজেলার ১৪নং শিকারপুর একটি জনবহুল গ্রাম। এগ্রামের চেয়ারম্যান আবুবক্কর সিদ্দীকি দিনরাত জনগণকে সচেতন করতে লিফলেট বিতরন করেছেন। স্কুল- কলেজ কিংবা মাদ্রাসা বাদ দেননি কোথাও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বারবার লাইভে আসছেন, এলাকার লোকজনের সাথে যোগাযোগ রক্ষাা করে চলেছেন।
স্থানীয় পর্যায়ে সবারই দায়িত্ব এ মহামারি ঠেকাতে এগিয়ে আসা। এ মহামারি কতটা ভয়ংকর হতে পারে এখনো আমরা উপলদ্ধি করতে পারছিনা। আসুন নিজে সচেতন হই, অন্যকে সচেতন করি।
শ্রমজীবী মানুষের রুটি-রুজিতে ইতোমধ্যেই টান-পড়েছে। বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি নাগরিক একবুক আতঙ্ক নিয়ে বিদেশের মাটিতে কাটাচ্ছে প্রত্যেকটা মুহূর্ত। কিন্তু সেটা আর কতদিন, জানেন না কেউ। জিনিসপত্র বাজার থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে। লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। শাট ডাউনের ভয়ে বাজার, সুপার মার্কেটের র্যাকগুলো শূন্য। যে যেমন পারছে চাল, ডাল, কাঁচা বাজার জমা করছে ঘরে। পুরোপুরি শাট ডাউন হলে খাবারও যে জুটবে না! তাই সাবধানের মার নেই।
ব্যক্তি থেকে সমষ্টি, আর তারপর বাজার অর্থনীতিতে ধস। ‘করোনা মহামারিতে’ এটাই এই মুহূর্তে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় আতঙ্ক-যা চোরাস্রোতের মতো প্রত্যেকটা দেশের অস্থি-মজ্জায় ছড়িয়ে যাচ্ছে। উৎপাদন নেই, পণ্যের চাহিদা নেই, সরবরাহ নেই। বাজারের মুখ থুবড়ে পড়াটাই স্বাভাবিক। সেটাই হচ্ছে। আর এই মুহূর্তে ঘুরে দাঁড়ানোর কোনও দিশা নেই। প্রতিষেধক কিন্তু এখনও নাগালের অনেক দূরে।
দেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে খুব দ্রুত। ইতোমধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা। এ অবস্থায় দেশে আগামী এক সপ্তাহ করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগের দুই কর্মকর্তা।
বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে আলাপের সময় এমন কথা বলেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) হাসান শাহরিয়ার কবির ও সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বি মিয়া।
সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বি মিয়া বলেন, পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে খুব দ্রুত। আগামী সাতদিন আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য, আইনশৃঙ্খলা ও জেলা প্রশাসনকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর প্রায় ২৫ লাখ প্রবাসী দেশে ফিরেছেন। যে যেখান থেকে হোক, তাদের তথ্যগুলো ভেরিফাই করতে হবে। তারা কী অবস্থায় আছে, রোগের কোনো লক্ষণ আছে কিনা, কাদের সঙ্গে থাকছে। এ তথ্য অনুযায়ী সমন্বিত ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রবাস ফেরতদের হোম কোয়ারেন্টাইন মেনে চলার আহ্ববান জানিয়ে তিনি বলেন, হোম কোয়ারেন্টাইন একটি সচেতনতার বিষয়। মূলত প্রবাসীরা নিজেরা যদি না বোঝেন কোয়ারেন্টাইন বিষয়টি কী? তাহলে এর সুফল তেমনভাবে পাওয়া যাবে না। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, বিভাগীয় ও জেলা কমিটি একটি রূপরেখা তৈরি করেছে। প্রশাসন ও পুলিশের সহায়তায় বাড়ি বাড়ি খবর নেয়া হচ্ছে।
আসুন নিজেকে সুরক্ষা করি। সমাজকে সুরক্ষা করি। দেশকে রক্ষা করি। এখন ভেদাভেদ ভুলে জাতীয় স্বার্থে কাজ করার সময়।