চসিক নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে দলীয় সমর্থনের বাইরে সব বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে যাবেন বলে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে ঘোষণা দেন চসিক নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের প্রধান সমন্বয়ক ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। কিন্তু মাঠে সক্রিয় বিদ্রোহী প্রার্থীদের অধিকাংশই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন নিজেদের মত।
বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) বিকেলে চসিক নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি বিদ্রোহীদের আবারও ডাকেন।
সেখানে তিনি ঘোষণা দেন- দলীয় সমর্থন না পেয়ে যারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তাদের আমরা বুঝিয়েছি। তারা নির্বাচন থেকে সরে যেতে সম্মত হয়েছেন। এখন যেহেতু প্রার্থীতা প্রত্যাহারের সুযোগ নেই, তাই তারা দলীয় সমর্থিত প্রার্থীকে সমর্থন দেবেন এবং প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন।
সংবাদ সম্মেলনের পর অন্তত ১২ জন বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তারা সবাই নির্বাচনের মাঠেই আছেন, মাঠ ছেড়ে যাননি।
আলকরণ ওয়ার্ডের বিদ্রোহী প্রার্থী তারেক সোলায়মান সেলিম বলেন, আমার পায়ে সমস্যা, হাঁটতে পারছি না। সেজন্য বৈঠকে যাইনি। আমি নির্বাচন করব। যতই চাপ আসুক, থামব না।
পাথরঘাটা ওয়ার্ডের অনুপ বিশ্বাস বলেন, আমাকে ডেকেছিল, আমি যাইনি। অ্যারেস্ট করলে করবে, কিন্তু আমি নির্বাচন করব। এই মুহুর্তে সরে গেলে মানুষের কাছে অসম্মানিত হব। আমি তো আওয়ামী লীগের কোনো পদে নেই, আওয়ামী লীগের ধারেকাছেও নেই। আমাকে নিয়ে টানাটানি করছে কেন বুঝতে পারছি না।
এনায়েত বাজার ওয়ার্ডের প্রার্থী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাব্বির চৌধুরী বলেন, করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কে আছি। এমনিতেই প্রচার-প্রচারণা বন্ধ করে ঘরে বসে আছি। বৈঠকে যাইনি। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী। আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরমও কিনিনি। আমার বসে যাবার কোনো সুযোগ নেই।
ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ডের প্রার্থী যুবলীগ নেতা হাসান মুরাদ বিপ্লব সন্ধ্যা ৭টার দিকেও গণসংযোগে ছিলেন। তিনি বলেন, আমি বৈঠকে গিয়েছিলাম মোশাররফ ভাইকে সালাম দেওয়ার জন্য। আমি নির্বাচন করবই। পেছনে যাবার কোনো সুযোগ নেই।
রামপুর ওয়ার্ডের এস এম এরশাদ উল্লাহ বলেন, ফোন করেছিল। শরীরটা খুব খারাপ। সেজন্য যাইনি। আমাকে কেউ ইলেকশন থেকে সরে যেতে বলেনি। আমি ইলেকশন করবই।
সংরক্ষিত ৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী আনজুমান আরা বেগম বলেন, পা মচকে গেছে। ফুলে গেছে। সেজন্য বৈঠকে যেতে পারিনি। আর আমার তো সরে যাবার সুযোগ নেই। জনগণ আমার নির্বাচন করে ফেলবে। আমি প্রচারণা বন্ধ করে দিলে তারা চালাবে। আমি ভোটকেন্দ্রে না গেলেও তারা ভোট দিয়ে আমাকে জিতিয়ে আনবে।
সংরক্ষিত ১০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী রাধা রাণী দেবী বলেন, আমি শেষ পর্যন্ত দেখব। মাঠে আমার অবস্থান ভাল। আমার সরে যাওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ৭ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৬১ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৫৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে দলীয় মনোনয়নের বাইরে প্রায় অর্ধশত প্রার্থী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, যাদের বিদ্রোহী বলা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে ১২ জন বর্তমান কাউন্সিলরও নির্বাচন করছেন।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের মাঠ থেকে সরিয়ে নিতে শেষ চেষ্টা করে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তবে দফায় দফায় বৈঠক করেও তাদের অধিকাংশকেই রাজি করানো যাচ্ছে না। যদিও আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিদ্রোহীরা দলীয় প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে সরে যেতে রাজি হয়েছেন।
কতজন বিদ্রোহী নির্বাচন না করার বিষয়ে একমত হয়েছেন, জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের নেতারা কোনো উত্তর দেননি।