চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে চকবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টুর বিরুদ্ধে। তিনি আওয়ামী পরিবারের কেউ নন, দাবি চকবাজার ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃবৃন্দের।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে মিন্টুর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে চকবাজার ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃবৃন্দ।সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে চকবাজার থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাফর আহমদ চৌধুরী বলেন, চকবাজার ওয়ার্ডে অরাজনৈতিক ব্যক্তি সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টুকে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় সমর্থন দেওয়ায় স্থানীয় নেতাকর্মীরা বিব্রতবোধ করছে।
কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রকাশিত তালিকার মাধ্যমে জানতে পারি, তিনি সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু নিজেকে চকবাজার থানা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা উল্লেখ করে মনোনয়ন চেয়েছেন আওয়ামী লীগ থেকে। অথচ এযাবৎকালে চকবাজার থানা আওয়ামী লীগের কোন উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়নি। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কখনো জড়িত ছিলেন না। এমনকি দলের সাধারণ সদস্যও ছিলেন না কখনো।লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হবার পর কাউন্সিলর হিসেবে ৭৭ সালে আত্মপ্রকাশ ঘটে এই প্রার্থীর। তিনি এতটা কৌশলী, কখনো রাজনীতিতে নিজেকে সম্পৃক্ত করেননি। যখন যার ক্ষমতা ছিল, সেই দলের সাথে সখ্যতা রেখে চলেছেন। যেন ক্ষমতার পালাবদলে নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারেন। আজ তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে দলীয় সমর্থন আদায় করেছেন, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। যে ব্যক্তি কখনো জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু উচ্চারণ করেনি, তাকে প্রার্থী হিসেবে দলীয় সমর্থন দেওয়া দুর্দিনের ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাকর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ সৃষ্টি করেছে।
জাফর আহমদ চৌধুরী বলেন, ১৯৮১ সালের পর দীর্ঘ ত্রিশ বছরের অধিক সময় ধরে চকবাজার এলাকাটি জামায়াত শিবির নিয়ন্ত্রিত ছিল। এখান থেকেই সারাদেশে শিবির পরিচালিত হত। এই এলাকায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করাটা ছিল খুবই কঠিন। সক্রিয় ভাবে যারা রাজনীতি করেছেন, মামলা-হামলা হত্যার শিকার হয়েছেন অনেকে। জামায়াত শিবির অধিপত্য বিস্তার করা দীর্ঘ ত্রিশ বছরের মধ্যে সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু কাউন্সিলর হিসেবে কিভাবে বহাল তবিয়তে ছিলেন? কখনো নির্যাতন, হামলা মামলার শিকার হয়েছেন এমন একটি নজির নেই।
তিনি বলেন, ৭৫ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর প্রতিবাদ তো দূরের কথা, উল্টো মেজর জিয়াউর রহমানের আশীর্বাদপুষ্ট হন তিনি। যা সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নিজ মুখেই বলেছেন। সেই ভিডিও ফুটেজ ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রচারিত হয়েছে। বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আন্দোলন সংগ্রাম করেছে, একদিন এক মুহুর্তের জন্যও তিনি রাজপথে ছিলেন নজির নেই। একজন অরাজনৈতিক সুবিধাভোগী ব্যক্তি, আজ আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে চেয়ারে অধিষ্ঠ থাকতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। অথচ, এ ওয়ার্ড থেকে দলের দুর্দিনের নির্যাতিত অনেক নেতাকর্মী কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। স্বজন হারানো, রক্ত ঝরানো, কারানির্যাতিতরা উপেক্ষিত হয়েছে।
চকবাজার ১৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টুকে দেওয়া দলীয় সমর্থন প্রত্যাহারের জন্য আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দলের মনোনয়ন বোর্ডের কাছে অনুরোধ জানান চকবাজার থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাফর আহমদ চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, চকবাজার থানা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক খালেক চৌধুরী, চকবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আমিনুল হক রমজু, চকবাজার থানা আওয়ামী লীগের সদস্য এডভোকেট মো. শাহেদুল আজম শাকিল, চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মোস্তাক আহমদ টিটু, চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য দেলোয়ার হোসেন ফরহাদ, চকবাজার ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা কায়সার আহমেদ, যুবলীগ নেতা এস.এম হিরু, এস.এম সালাউদ্দিন, ছাত্রলীগ নেতা রাসেল, সাজিত, রাব্বি, চিন্ময় প্রমুখ।
১৯ ফেব্রুয়ারী কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ সমর্থন দিয়ে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। অতীতে উন্মুক্ত থাকলেও এবার দলীয়ভাবে কাউন্সিলর প্রার্থী নির্ধারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এবার চকবাজার ১৬নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টুকে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় সমর্থন দেওয়া হয়। সমর্থনের বিপরীতে তিনি নিজেকে ওয়ার্ড আয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিচয় দেন যা পরবর্তীতে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় তোলে।