বসন্ত আর ভালোবাসা দিবস- এবার দুই-ই মিলেমিশে একাকার। দুই উৎসবের উদযাপন একদিনে, তাই আনন্দ যেন একটু বেশি-ই! ইটপাথরের নগরে বসন্তের রূপ-রস মনের মতো ধরা না দিলেও নগরের মানুষ ঠিকই উদযাপন করবে দিনটি। বসন্ত আর ভালোবাসাকে একইসঙ্গে বরণ করার আনন্দে নগরের অলি-গলিতে বেজে উঠবে সুর, ‘আহা আজি এ বসন্তে’/‘বসন্ত এসে গেছে’/‘মনের রঙ লেগেছে বনের পলাশ জবা অশোকে’।
আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস `সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে`। তবে তরুণ-তরুণী শুধু নয়, নানা বয়সের মানুষের ভালোবাসার বহুমাত্রিক রূপ প্রকাশের আনুষ্ঠানিক দিন আজ। এ ভালোবাসা যেমন মা-বাবার প্রতি সন্তানের, তেমনি মানুষে-মানুষে ভালোবাসাবাসির দিনও এটি। `কিন্তু শুধু একটি দিন ভালোবাসার জন্য কেন?` এ প্রশ্নে কবি নির্মলেন্দ গুণের ছোট জবাব, `ভালোবাসা একটি বিশেষ ৭ দিনের জন্য নয়। সারাবছর, সারাদিন ভালোবাসার। তবে আজকের এ দিনটি ভালোবাসা দিবস হিসেবে বেছে নিয়েছে মানুষ।`ইতিহাসবিদদের মতে, দুটি প্রাচীন রোমান প্রথা থেকে এ উৎসবের সূত্রপাত। এক খ্রিস্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ফাদার সেন্ট ভ্যালেনটাইনের নামানুসারে দিনটির নাম `ভ্যালেনটাইনস ডে` করা হয়। ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি খ্রিস্টানবিরোধী রোমান সম্রাট গথিকাস আহত সেনাদের চিকিৎসার অপরাধে সেন্ট ভ্যালেনটাইনকে মৃত্যুদন্ড দেন। মৃত্যুর আগে ফাদার ভ্যালেনটাইন তার আদরের একমাত্র মেয়েকে একটি ছোট্ট চিঠি লেখেন, যেখানে তিনি নাম সই করেছিলেন `ফ্রম ইওর ভ্যালেনটাইন`। সেন্ট ভ্যালেনটাইনের মেয়ে এবং তার প্রেমিক মিলে পরের বছর থেকে বাবার মৃত্যুর দিনটিকে ভ্যালেনটাইনস ডে হিসেবে পালন করা শুরু করেন। যুদ্ধে আহত মানুষকে সেবার অপরাধে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত সেন্ট ভ্যালেনটাইনকে ভালোবেসে দিনটি বিশেষভাবে পালন করার রীতি ক্রমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
সময়ের সঙ্গে সাজ পোশাকেও আসে পরিবর্তন। একসময় হলুদ রঙের শাড়ি আর মাথায় হলুদ ফুল- এটাই ছিল পহেলা ফাল্গুনের সাজ। কিন্তু ফ্যাশনে পরিবর্তন এসেছে। এখন সবুজ, বাসন্তী, লাল এই রঙগুলোও পহেলা ফাল্গুনে বেশ চলছে। অন্যদিকে, ভালোবাসার রং নাকি লাল। লাল, নীল পোশাক পরে ভালোবাসা দিবস উদযাপন নগরের চিরচেনা রূপ। এবার যেহেতু ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুন ১৪ ফেব্রুয়ারিতে, ফলে সাজ-পোশাকে একই সঙ্গে ফাগুন ও ভালোবাসার রঙের ছোঁয়া থাকছে। শুধু হলুদ, লাল, সবুজ বা মেরুনই নয়, অনেকেই এই দিনে বেছে নেবে সাদা, নীল, কালো, নেভি ব্লু, ঘিয়ে রঙের পোশাক।
বসন্তের সাজে থাকে বাঙালিয়ানা। সুতি কী খাদি শাড়ি, হাতে রেশমি চুড়ি, চোখে কাজল, কপালে টিপ, খোপায় রঙিন ফুল, গলায় মালা- বাঙালি মেয়ের সাজের এই চিরচেনা রূপ দেখা যায় বসন্তে। কেউ কেউ বেণী করে চুলে ছড়াতে পারেন রজনী গন্ধার সুবাস। আবার অনেকে চুল খোলা রেখে মাথায় হেডপিস পরতেও পছন্দ করেন। শুধু শাড়িই না, সালোয়ার কামিজ, কুর্তি, টপসও মন্দ লাগবে না এদিনে। এই পোশাকগুলোর সঙ্গে পছন্দমতো ডিজাইনের প্যান্ট কিনতে পারেন।
ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুন- দুই উৎসবই বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে গেছে। উৎসব উদযাপনের ঢঙে পরিবর্তন এলেও উৎসবের মাহাত্ম একই রয়ে গেছে। বসন্তের রঙে সকলের ভালোবাসা থাকুক অমলিন।
সিএনএন ক্রাইম নিউজ।